………….সিরাজুল ইসলাম, তেহরান থেকে।
সিরিয়ার আলেপ্পো নগরীর লড়াইয়ে বিভিন্ন শক্তি যুক্ত রয়েছে। এ লড়াইয়ে যেমন আছে সিরিয়ার সরকারি সেনা তেমনি আছে কথিত ‘জিহাদি গ্রুপ’ আবার রয়েছে সরকার-বিরোধী গেরিলা গোষ্ঠী। সংকটের এ পর্যায়ে আলেপ্পো মুক্ত করা হবে সরকারের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। অন্যদিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো মনে করে সিরিয়া ইস্যুতে ভবিষ্যত যেকোনো আলোচনায় আলেপ্পো হবে দরকষাকষির জন্য ত্রুপের তাস। সে কারণে সবাই চাইছে আলেপ্পো দখলে নিতে। এ মুহূর্তে সিরিয়া সংকটের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে আলেপ্পো। আলেপ্পো সন্ত্রাসীদের হাতছাড়া হলে তাদের সমর্থনকারী তুরস্কসহ সব শক্তি ভবিষ্যত আলোচনায় দুর্বল অবস্থানে চলে যাবে। সে কারণে আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা; অন্যদিকে সরকারি বাহিনী তাদের অভিযান চূড়ান্ত করতে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে এ শহরের দিকে। তুরস্ক সীমান্তে আলেপ্পোর অবস্থান হওয়ায় এর কৌশলগত গুরুত্ব অনেক বেশি।
ইতিহাসের পাতায় আলপ্পো: যে আলেপ্পোর এত গুরুত্ব সে আলেপ্পোর ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে প্রাথমিক একটি ধারণা নেয়া জরুরি। আলেপ্পো হচ্ছে বিশ্বে যে কয়টি প্রাচীনতম শহর আছে তার একটি। খ্রিস্টপূর্ব ছয় হাজার বছর আগে থেকে এ শহরে অব্যাহতভাবে মানুষের বসবাস রয়েছে। ইতিহাসের নানা পর্যায়ে এ শহর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে বাণিজ্যের কেন্দ্রহিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আধুনিক ইতিহাসে আলেপ্পো ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ এবং কনস্টান্টিনোপল ও কায়রোর পরে তৃতীয় জনবহুল শহর চিল এটি।
যখন সিরিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো আলেপ্পো ছিল দেশের সবচেয়ে বড় শহর ও বাণিজ্যকেন্দ্র। ২০১১ সাল পর্যন্ত এ শহরের জনসংখ্যা ছিল ৩০ লাখ। সিরিয়ার বেশিরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠান আলেপ্পো ও তার আশপাশে গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে দেশের শ্রমশক্তির শতকরা ৫০ ভাগ নিয়োজিত ছিল। এখানে বসবাস ছিল অ্যাসিরিয়ান, কুর্দ, আরব, আর্মেনিয়ান এবং তুর্ক জাতিগোষ্ঠীর। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে এক সঙ্গে বসবাস করত এ শহরে। সিরিয়ার আলেপ্পোতে ছিল মধ্যপ্রাচ্যের চতুর্থ বৃহত্তম কিন্দি ক্যান্সার হাসপাতাল।
সংকট শুরুর দিকের কথা: ২০১১ সালে আরব বসন্ত শুরু পর দ্রুতই তিউনিসিয়া ও মিশরের স্বৈরশাসকেদের পতন হয়ে গেল। পুরো মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে লাগলো বিপ্লব তথা পরিবর্তনের ঢেউ। সে ঢেউয়ে টলটলায়মান হয়ে উঠল সৌদি রাজতন্ত্রের গদি। দিশেহারা হয়ে সৌদি আরব, আমেরিকা, ইসরাইল এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা আরব রাজা-খলিফাদের বাঁচাতে চটজলদি পরিকল্পনা করে ফেলল এবং আরব বসন্তকে তাদের সবার অভিন্ন শত্রু সিরিয়ার দোরগোড়ায় নিয়ে আটকে দিল। এ দলে এসে ভিড়লেন তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আজকের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। শুরু হলো বিদেশি মদদপুষ্টদের বিক্ষোভ; এর আগুন থেকে ইতিহাসের আলেপ্পো নগরীও বাদ গেল না।
২০১১ সালের আগস্ট থেকে আলেপ্পোয় শুরু হলো বিক্ষোভ-সমাবেশ। সে বিক্ষোভ হলো কথিত বিরোধীদলের পক্ষে; বিক্ষোভ হলো প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষেও। কিন্তু দিন দিন সহিংসতার মাত্রা বাড়তে থাকলো। সন্ত্রাসীদের ধারাবাহিক হামলায় প্রকম্পিত হলো আলেপ্পো শহর। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযান চালালো যাকে পশ্চিমা জগৎ ও তাদের গণমাধ্যম “নির্বতনমূলক” বলে হৈ চৈ শুরু করল।
সন্ত্রাসীদের দফায় দফায় হামলার মুখে ২০১২ সালের জুলাই মাসে আলেপ্পো শহরে যুদ্ধ কার্যক্রম শুরু করল সরকার। ভয়াবহ রাস্তার লড়াইয়ের পর ২০১৩ সালের বসন্তে সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিজেদের দখলে থাকা এলাকাতে তাদের কার্যক্রম অনেকটা সীমিত করে ফেলল।
সরকারি সেনারা আলেপ্পো শহরের পশ্চিাংশ দখলে নিল যার মধ্যে পড়ল ঐতিহাসিক দূর্গ এবং শহরের প্রায় অর্ধেক এলাকা। অন্যদিকে সন্ত্রাসীরা শহরের পূর্বাঞ্চলের দখল নিল। স্মরণ করা যেতে পারে শহরটি তুরস্কের সীমান্ত থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সে কারণে তুরস্ক থেকে সন্ত্রাসীদের সরাসরি অস্ত্র ও অন্যান্য রসদ পেতে মোটেই সমস্যা হলো না।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারি সেনা ও সন্ত্রাসীরা -দুপক্ষই বড় কোনো সংঘর্ষে না জড়িয়ে শুধুমাত্র নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। তবে একই সময়ে আলেপ্পোর শিল্পাঞ্চল পরিণত হয় যুদ্ধক্ষেত্রে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সিরিয়ার সরকারি সেনারা শহরের অংশবিশেষ ঘেরাও করতে সক্ষম হয়।
সংঘাত শুরুর পর কী হয়েছে আলেপ্পোতে?: সিরিয়া সংঘাত শুরুর পর আলেপ্পোতে কী হয়েছে? সাধারণভাবে বলা যায়- আর দশটি শহরের মতোই নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ সম্পর্কে রাশিয়ার গণমাধ্যম আরটি’র সিরিয়া প্রতিনিধি মুরাদ গাজিদেভ আলেপ্পো থেকে জানাচ্ছেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন শহরের এমন কোনো একটি রাস্তা নেই যেখানে যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন দেখা যাবে না। যদিও অনেকে চেষ্টা করেছে কিন্তু এমন কোনো জাতিগোষ্ঠী নেই যারা এসব সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে নি।” তিনি সম্প্রতি সেখানে ফিরে দেখতে পেয়েছেন, সন্ত্রাসীরা আলেপ্পো শহর থেকে তুরস্ক সীমান্তে ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে যাচ্ছে বিক্রির জন্য। সিরিয়া সরকারের তথ্যমতে- সংকট শুরুর এক বছরের মধ্যে আলেপ্পো শহরের ভেতর ও আশপাশের হাজার হাজার কারখানা লুট করা হয়েছে। এসব কারখানার গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি চুরি করে সন্ত্রাসীরা তুরস্ক সীমান্তে নিয়ে বিক্রি করেছে।
আলেপ্পোতে সন্ত্রাসীরা গণহত্যা বা গণভাবে খুন করে নি তা নয় বরং আইএস এবং আল-নুসরা ফ্রন্টের সন্ত্রাসীরা যেখানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান করছে সেখানে গণভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। সাংবাদিক গাজিদেভ এ প্রসঙ্গে ২০১২ সালের একটি বিভীষিকাময় ভিডিও’র কথা উল্লেখ করেছেন। ওই ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল- সন্ত্রাসীরা কয়েকজন ডাক-কর্মীকে একটি ভবনের চাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। কারণ তারা সরকারের পক্ষে কাজ করছিল। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পুরো শহরে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। এমনকি তারা যে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত সে এলাকায়ও পানি-বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। এর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে তারা সবকিছু বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সে কারণে এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই ওঠে যে, আলেপ্পো শহর থেকে লোকজন পালিয়ে যাবে তাতে অবাক হওয়ার কী আছে?
তুরস্ক এবং আইএস’র ২ ফিল্ড কমান্ডার: সিরিয়ায় দেশি-বিদেশি সন্ত্রাসীদের সহিংসতা শুরুর প্রথম দিকেই আলেপ্পো হয়ে পড়ে বিদেশি সন্ত্রাসীদের আস্তানা। এর প্রধান কারণ হচ্ছে- তুরস্কের সঙ্গে পুরো আলেপ্পোর বিশাল সীমান্ত রয়েছে। ফলে তুরস্ক হয়ে বিদেশি সন্ত্রাসীরা সহজেই সিরিয়ায় ঢুকে পড়তে পারে। সংকট শুরুর প্রথম থেকেই তুরস্ক বাশার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সে কারণে সন্ত্রাসীদের আসার পথে কখনো তুরস্ক বাধা দেয় নি বরং পথ করে দিয়েছে। উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস’র আবু ওমর আল-শিশানি এবং মুসিলম আবু ওয়ালিদ শিশানির মতো ফিল্ড কমান্ডাররা আলেপ্পোর লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে।
আইএস’র পাশাপাশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-নুসরাও আলেপ্পো ও আশপাশের এলাকায় যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। আইএস’র মতো এই গোষ্ঠীও সারা বিশ্ব থেকে উগ্র কথিত ‘ইসলামপন্থী’ সন্ত্রাসীদের যোগাড় করেছে। এদের নাকি প্রধান লক্ষ্য শরিয়াভিত্তিক ইসলামি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা; কিন্তু আলেপ্পোয় এখন বসবাসকারী তিন লাখ মানুষের মাঝে ভীতি ছড়ানোই এদের প্রধান কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মতো আলেপ্পো ও আশপাশের এলাকায় তৎপর ইসলামিক ফ্রন্ট, জাবহাত আনসার আল-দ্বীন এবং ককেশাস আমিরাত ইন দ্যা লিভ্যান্ট নামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৎপর রয়েছে। এরা সবাই কথিত ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে সহায়তা করে।
সাম্প্রতিক লড়াই এবং পশ্চিমা গণমাধ্যম: গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পশ্চিমা গণমাধ্যম জোর প্রচারণা চালিয়ে আসছে যে, ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে আলেপ্পো। কিন্তু সিরিয়ার বহু শহর সন্ত্রাসীদের সহিংসতার কারণে একই রকম অবস্থায় পড়েছে এবং হোমস ও দেইর আজ-জোরসহ কয়েকটি শহর এরইমধ্যে এ অবস্থা মোকাবেলা করেছে। তা নিয়ে কিন্তু পশ্চিমা গণমাধ্যমের তেমন কোনো উচ্চবাচ্য ছিল না। আলেপ্পোকে নিয়ে পশ্চিমাদের এই হৈচৈ-এর মূল কারণ হচ্ছে আলেপ্পো মুক্ত হলে সিরিয়ার সরকারের পক্ষে বিরাট বিজয় অর্জিত হয় এবং দেশের চলমান সংকট অবসানের ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্টে হয়ে উঠবে। সে কারণে এর বিরুদ্ধে পশ্চিমা সরকারগুলোর স্বার্থে কোমর বেধে লেগেছে তাদের অনুগত মিডিয়াগুলো। এসব মিডিয়া আরব রাজা-বাদশাহদের স্বার্থও একইভাবে রক্ষা করে চলেছে। তবে আরব রাজাদের পক্ষে কথা বলার সময় পশ্চিমা গণমাধ্যমের জন্য গণতন্ত্রের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না।
যাহোক, পশ্চিমা গণমাধ্যম ধারাবাহিকভাবে আলেপ্পোয় ভবন ধ্বংসের দৃশ্য দেখাচ্ছে কিন্তু খুব কম মিডিয়া বলছে, গত চার বছর ধরে আলেপ্পো শহর চুরমার হয়েছে। এসব হামলার সময় সন্ত্রাসীরা বিদ্যুতের গ্রিড, পানির লাইন এবং স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিদ্যুতব্যবস্থা ২০১৩ সালে আংশিক চালু করা সম্ভব হয়েছে এবং এ কাজে স্থানীয় লোকজনের গঠন করা ম্যানেজিং কাউন্সিল সার্বিকভাবে দেখভাল করছে। কিন্তু পানি সরবরাহ ব্যবস্থা এখনো মারাত্মক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। একইসময়ে আলেপ্পো শহরে খাদ্য সরবরাহ কমবেশি নিয়মিত ছিল। তবে নানা ঝুঁকির কারণে দাম অনেক বেশি।
উপরের এসব ঘটনা প্রমাণ করে আলেপ্পোর মানবিক ত্রাণ পরিস্থিতি অনেকদিন আগে থেকেই বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে রয়েছে; সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অভিযানের কারণে নয়।
সম্প্রতি পশ্চিমা কোনো কোনো গণমাধ্যম রির্পোট করেছে যে, রাশিয়ার বিমান হামলা ও ইরানি বাহিনী আলেপ্পো থেকে লোকজনকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। কিন্তু যেসব এলাকা সিরিয়ার সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেসব এলাকায় অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হওয়া বিপুল সংখ্যক লোকজনকে এরইমধ্যে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এরা সবাই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে মূলত সন্ত্রাসীদের নানা বর্বর কর্মকাণ্ডের কারণে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুসারে সিরিয়ায় অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হয়েছে ৬৫ লাখ মানুষ।
টার্নিং পয়েন্ট: আলেপ্পোকে ঘিরে সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটে চলেছে তাকে বলা হচ্ছে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট। ২০১৩ সালের শরতকালে প্রথম রিপোর্ট বের হয়েছিল যে, আলেপ্পো মুক্ত হতে যাচ্ছে। কিন্তু আসলে তা সহজ কাজ ছিল না। সিরিয়ার বাহিনী ধীরে ধীরে আলেপ্পোর আশপাশ ও উপকণ্ঠ মুক্ত করছে। তাতে মনে হচ্ছে- সিরিয়ার সামরিক বাহিনী শহরটিকে ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলা ও অবরুদ্ধ করার কৌশল নিয়েছে। সরকারি বাহিনীর এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আলেপ্পোর বিরাট অংশ এখনো সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সরকারি সেনারা এখনো শহরের পূর্বাংশ পুরোপুরি ঘিরে ফেলতে পারে নি। বর্তমানে সিরিয়ার দুটি সেনাদল দু দিক থেকে আলেপ্পোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একটি দল যাচ্ছে নুবল শহর থেকে অন্য দলটি অগ্রসর হচ্ছে আল-জাহরা শহর থেকে। তাদের এ অগ্রযাত্রায় রাশিয়ার বিমান বাহিনীর সমর্থন রয়েছে। এর ফলে আলেপ্পো প্রদেশের অংশবিশেষ থেকে শহরের উত্তরাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তুরস্ক থেকে সন্ত্রাসীদের জন্য যেসব রসদ সরবরাহ আসত সিরিয়ার সেনাবাহিনী তাতেও বাধা সৃষ্টি করছে। তারপরও আলেপ্পোর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে সন্ত্রাসীরা। সর্বোপরি, সিরিয়ার সেনাবাহিনী যদি আলেপ্পো শহর ঘেরাও করতে সক্ষম হয় তাহলেও কয়েক মাস লাগবে ওই শহরের ওপর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। তার একটা বড় কারণ হলো- সেনাবাহিনী আলেপ্পো শহরে ব্যাপকভাবে অভিযান চালাতে পারবে না; বড় অভিযান চালালে শহরে বসবাসকারী বেসামরিক লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি হবে অনেক বেশি।
সিরিয়ার বিদ্রোহী ও বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের জন্য আলেপ্পোকে পশ্চিমা জগৎ এবং তুরস্ক বড় ‘তাস’ হিসেবে মনে করে। সিরিয়া বিষয়ে আলোচনার সময় এ তাসকে তারা ব্যবহার করতে চায়। সে কারণে যদিও এ শহরের একটা অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে তারপরও সিরিয়া বিষয়ক শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে আলেপ্পো শহরের ওপর নিয়ন্ত্রণ আলাদা রকমের শক্তি যোগাবে। আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ যার হাতে তার কাছে থাকবে ত্রুপের সেই তাস। আলোচনার ফলাফল তাদের পক্ষেই যাওয়ার কথা।
(২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে লেখা এ কলামটি কিছু পাঠকের অনুরোধে পুনঃপ্রকাশিত হলো)
ভারটেক্স নিউজ/এমএসআই/৫
মন্তব্য করুন