……….এস এম নাসিম।
সম্প্রতি দেশে ধর্ষণের মহামারি লেগেছে বলা যেতে পারে। সেই সাথে বলৎকার বা সমকামিতা থেমে নেই। বর্তমানে ধর্মীয় আলোচনা ও আলোচকের সংখ্যা বেড়েছে হাজারে হাজারে। কিন্তু অপরাধের পরিমাণ কতটুকু কমেছে সেটা ভাবনার সময় হয়তো এসেছে। অনেক বক্তা ধর্ষণের জন্য নারীর দেহ, সৌন্দর্য ও পোশাককে দায়ী করে আলোচনা করে থাকেন। কিন্তু বলাৎকারের জন্য কার পোশাক দায়ী- সেটা কিন্তু স্পষ্ট করে কোন আলোচকই কিছু বলেন না।
কয়েকদিন আগে পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে কথা হলো একজন মায়ের সাথে। তিনি জানালেন এক ভয়ংকর তথ্য। তার তিন ছেলে, বাবার খুব ইচ্ছা ছেলেকে আলেম বানাবেন। উনার জানাজার ইমামতি করবেন। কত পবিত্র আবেগ মায়ের চোখেমুখে! তিনি জানান, ‘ছেলের ভালো লেখাপড়ার জন্য, আরবি ভালো বোঝার জন্য বাড়িতে একজন হুজুর লজিং রাখি। একদিন বাড়িতে মেহমান আসায় ছেলেটাকে হুজুরের সঙ্গে থাকতে দেই। আর এটাই কাল হলো আমার। সেদিন সকালে ছেলেটি আমার কাছে এসে কাঁদতে লাগল। অনেক জিজ্ঞাসার পর বলল, হুজুর আমার সাথে খারাপ কাজ করেছে। সেই থেকে ছেলেটি আমার কেমন যেন মনমরা হয়ে গেছে। ছেলের মনমরা ভাব দেখে পরিবারের মান সম্মান, বাচ্চার সম্মানের কথা ভেবে এখন স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি। বলেছি হুজুর আর হতে হবে না।”
এটা গেল একজন মায়ের কথা। এবার আসি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনাচিত্রে।
সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাইনাদী নতুন মহল্লা এলাকায় অবস্থিত মারকাযুল কোরআন কওমী মাদরাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে বলাৎকারের অভিযোগ করেছে এগারো বছর বয়সী শিক্ষার্থী। বলাৎকারের শিকার ওই মাদরাসা ছাত্রের পরিবার জানায়, গত ১৫ দিন ধরে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মাদরাসার শিক্ষক শহিদুল্লাহ ছাত্রটিকে বলাৎকার করে আসছে। ব্যথা কমাতে ছাত্রটিকে ব্যথানাশক ওষুধও সেবন করাতেন ওই শিক্ষক। ছাত্রটি মাদরাসা থেকে বাসায় চলে যেতে চাইলে তাকে নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখাতেন। শেষবার শিশুটি বলাৎকারের শিকার হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার সময়।
পঁয়ত্রিশ বছরের যুবক নাছির উদ্দিন। রাঙ্গুনিয়ার একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক। সেই সঙ্গে পেয়েছেন মাদ্রাসার হোস্টেলের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বে থাকার সুযোগ। শরীর শিউরে ওঠার মতো কর্মকাণ্ড তার!
কওমি শিক্ষক নাছির উদ্দিন সেই রকম নিষ্ঠাবানও। বিশৃঙ্খলা তার একদমই পছন্দ না। তাই তো তিনি একেবারে রুটিন করে দিয়েছেন, ওস্তাদের খেদমতে কবে কখন কোন শিশু হাজির হবে। কোনো শিশু তার আহ্বানে সাড়া না দিলে তাকে বাধ্য করার জন্য কারণে অকারণে তাকে বেধড়ক মারধর করা হতো। যেহেতু সেখানে বেশিরভাগ শিশুই এতিম/দরিদ্র পরিবার থেকে আসা, শেষ পর্যন্ত তার পক্ষে হুজুরের প্রস্তাবে হ্যাঁ বলা ভিন্ন কোনো উপায় থাকতো না।
এ যেন ছোট বেলায় পড়া গল্পের অত্যাচারী সিংহের মতো, যে কিনা বনের পশুদের সাথে চুক্তি করেছিল যে, প্রতিদিন একটি করে প্রাণী খাবার হিসেবে তার নিকট চলে এলে সে আর যার-তার ওপর অত্যাচার করবে না।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সকালে আদালতে পাঠানো হলে নাছির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে বলাৎকারের অভিযোগ স্বীকার করেছে। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন তার ফেসবুক পেইজে দেয়া স্ট্যাটাসে তুলে ধরেছেন এসব তথ্য।
জবানবন্দিতে নাছির বলেছে, “স্যার, ওরা তো খুব ছোট। তাই আমি সবসময় চেষ্টা করি, যেন ওরা বেশি ব্যথা না পায়। আমি তো ওদের শিক্ষক, ওরা ব্যথা পেয়ে কান্নাকাটি করলে আমার খুব কষ্ট লাগে।”
২৫ অক্টোবর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আট বছর বয়সী এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে বলৎকারের অভিযোগে একই মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২২ অক্টোবর শিক্ষকের ডাকে সায় না দেওয়ায় চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কাশিপুর দারুল উলুম কওমি মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র নাসিমকে বেধড়ক মারপিট করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক মাজেদ হোসেন ও শাহিন হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ।
গত ২৮ অক্টোবর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘুমন্ত এক শিশুকে ডেকে তুলে বলাৎকার করেছে আজিজুল নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষক। ওই শিক্ষক রুমে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে বলাৎকার করে। সেই অভিযোগে পুলিশ ওই শিক্ষককে আটক করেছে। আজিজুল কালিয়াকৈর উপজেলার সাহেবাবাদ এলাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক।
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় এক মাদরাসা ছাত্রকে পায়ে শিকল বেঁধে অমানবিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগে লুৎফর রহমান এক মাদরাসা শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ।
ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি মাদ্রাসার দুই ছাত্রকে বলাৎকার করার অভিযোগে সেই মাদ্রাসার একজন শিক্ষক গ্রেপ্তার হয়েছে। যে উদাহরণগুলো দিলাম সেগুলো বিভিন্ন গনমাধ্যমে উঠে আসা ও পুলিশের হাতে আটক হওয়ার কিছু খন্ড চিত্র। এ রকম নিয়মিত অগণিত শিশুকে শিক্ষকদের লালসার শিকারে পরিণত হতে হয়। আরো গভীরে গেলে হয়তো অনেক বেশি তথ্য পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ওয়াজ মহাফিলে এই মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অসামাজিক, অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে। সমাজের পাপ রোধে নারীর পোষককে দায়ী করে বুলি ছাড়ে। অর্থৎ তাদের নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে কতই না কুপ্রবৃত্তি।
যেখানে বলাৎকার বা সমকামিতা সব ধর্মেই নিষিদ্ধ। কুকুর-বিড়ালও সমলিঙ্গের কারো সঙ্গে যৌন চাহিদা পূরণে আগ্রহী নয়। সেখানে মাদ্রাসার শিক্ষকদের কুরুচিপূর্ণ লালসা থেকে রেহায় পায় না কোরআন হাদিস শিখতে আসা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
আদ ও সামুদ জাতিকে সমকামিতার অপরাধে মহান আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছেন। সেই একই অপরাধে কওমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কী ধরনের শাস্তি হওয়া উচিত?
পৃথিবীতে এখনো ৪৪ টি দেশে সমকামিতার শাস্তি হিসেবে জেলদণ্ডের বিধান বলবৎ আছে। সৌদি, আরব, মিশরসহ অনেকে দেশে সমকামিতার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। শিশু বলাৎকার থামাতে আমাদের দেশেও শাস্তির বিধান কঠিন করা হোক; আইনের যথাযথ প্রয়োগ হোক- এটা সময়ের দাবি।
ভারটেক্স নিউজ/এমএসআই/৭
মন্তব্য করুন