……….সিরাজুল ইসলাম।
রোববার সারাদিন যে কথাটা বার বার মনে পড়েছে তাহলো- আমরা জাতি হিসেবে কেমন? জাতি হিসেবে আমরা আসলে কতটা ভালো? এ প্রশ্নের জবাবে বার বার মনে মনে বলেছি- ‘নিকৃষ্ট’। কেন বলেছি এমন কথা? বলেছি- একটি কারণে। অনেক যুক্তি-তর্ক মনে আনি নি; এনেছি একটি ইস্যু। সেটি এসএসসি পরীক্ষার কিছু চিত্র।
একটা সময় ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত নষ্ট করার জন্য বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষি, শিক্ষক আরো কত শ্রেণির লোক ছুটে যেত এসএসসি পরীক্ষার হলে। মহান উদ্দেশ্য হলো- নকল সরবরাহ করা, যে করেই হোক পাস করাতে হবে পরীক্ষার্থী মহোদয়কে। যেসব গুণী পরীক্ষার্থী নিজেই যথেষ্ট সাহসী আর এক্সপার্ট তারা অতি কৌশলে বেশ আর্টিস্টিক ওয়েতে নকল কেটে পকেট ভরে নিয়ে যেত। তবে নকলের বড় ঢেউ ছিল শুভাকাঙ্ক্ষিদের চেষ্টা-প্রচেষ্টায়। তাদের থামানো বড় কঠিন কাজ ছিল পুলিশের জন্য। নকল সরবরাহ করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে পরীক্ষার্থীর স্বজনদের কত ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে! কোথাও কোথাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করার মতো ঘটনা ঘটেছে, হতাহতের ঘটনাও ছিল না- তা নয়। এত কিছু করেও অনেক কীর্তিমানের পাস নিশ্চিত করা যায় নি। সময়টা বড় খারাপ গেছে এ দেশে।
উপায়হীন হয়ে পরীক্ষার হলের চারপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হতো। পুলিশ দিয়ে পিটিয়েও ঠেকানো মুশকিল ওই কল্যাণকামী (!) জনতাকে। ভাবা যায়- এসএসসি পরীক্ষার হল পাহারা সহজ করার জন্য আর নকল থেকে বাঁচতে ১৪৪ ধারা জারি জরুরি হয়ে পড়ে। আমরা তো সেই জাতি! এখন এই চিত্র আছে কিনা জানি না। বহুদিন দেশ থেকে দূরে থাকার কারণে জানা নেই। আবার দেশে থাকা শুরু করলেও দেখা হয় নি, রুচিও হয় নি। তবে শুনি, এখন মহান পেশায় নিযুক্ত বহু স্যার পাসের কর্মটি সহজ করে দিয়েছেন অভিনব সিস্টেমে। তারা হলে বই খুলে দেন পরীক্ষার্থীদের সামনে। বলেন, লেখ। ভয় পেও না বাছাধন। অফিসার এলে আমরা দেখব। তোমরা লেখ।”
এমন ঘটনা শুনেছি ঘটনার সাক্ষী এক বালকের কাছ থেকে। কারিগরী কলেজে ভর্তি হওয়ার পরও একদিনের জন্য হাতে-কলমে কিছু শেখানো হয় নি। অথচ সেই বালক এ গ্রেড নিয়ে পাস করেছে। সেই বলেছে বই খুলে দেয়ার কীর্তিগাঁথা আর তার অন্তরাত্মা কেঁপে যাওয়ার কথা। জানিয়েছি- “ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম।” স্যারেদের অভয় বাণীও তার হাত কাঁপা ঠেকাতে পারছিল না।
শুনতে পাই–এসব সিস্টেমে পাস কনফার্ম না হলে খাতা দেখার সময় বাকি ব্যবস্থা করে দেন এক্সামিনার সাহেব। পরীক্ষার্থী ফেইল করলে স্কুলের এমপিও বাতিল হবার আশংকা থাকে, বেতন আটকে যেতে পারে। ফলে এইসব ঝামেলায় না গিয়ে স্যারেরা সহজ পথ বেছে নিয়েছেন। এ পন্থায় সবাই ঝুকিমুক্ত!! পাস কনফার্ম আবার বেতনও কনফার্ম। সবার চাকরি কনফার্ম। কোথাও কোনোা অশান্তি নেই। আমরা এভাবেই ‘উন্নত জাতিতে’ পরিণত হচ্ছি প্রতিদিন, প্রতিবছর।
ভারটেক্স নিউজ/এমএসআই/২
মন্তব্য করুন